পৃথিবীতে মাত্র দুটি ক্লাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। ক্লাস দুটোর পরিচয় হলো ক্লাস এইট আর ক্লাস ফাইভ। ক্লাস এইট হলো এমন এক ক্লাস যেখানে ছেলেরা হয় রত্নসেন। তারা মেয়েদের মধ্য এমন কিছু পায় যা অকারনেই ভালো লাগে অযথাই মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। আর ক্লাস ফাইভের মেয়েরা হয় পদ্মাবতীর রুপের অঙ্কন। বড়ই কষ্টের বিষয় সেই সময় রত্নসেনদের কাছে কোন পোষা হিরামন থাকে না। হিরামনরা বেশ দুষ্ট প্রকৃতির হয় এরা রত্নসেনদের দখলে না থেকে চুপচাপ বসে থাকে পদ্মাবতীর সখি হয়। গল্প কেন বাস্তব হয় না? রত্নসেন কেন লেখক হয়ে গল্পটা তার করে নিতে পারে না? রত্নসেনরা বোকা হয় খুবই বোকা।
আমি ক্লাস ওয়ান থেকে অনার্স পর্যন্ত পড়াশোনার কথা কিন্তু জানি। ভুলে যাবার কারণটা কোথায় বলতো? যেদিন তোমার মধ্যে পদ্মাবতীকে দেখেছিলাম সেদিন থেকে দুটি ক্লাসের বাহিরে অন্য সব ক্লাসের কথা আমি ভুলে গেছি। সেসময় আমি আলাওলের পদ্মাবতীকে চিনতাম না জানতাম না মধ্যযুগীয় প্রেমের কথা। প্রাচীন, মধ্য, আধুনিক সব সাল সন মিলিয়ে আমার মধ্যে কিছু একটা তৈরি হলো যা হযবরল। এই হযবরলকে এবার সাজাতে হবে বানাতে হবে পুঞ্জিকা। পুঞ্জিকা বলতেই মনে পড়ে গেল সম্রাট আকবরের কথা ।বাংলার সাল আবিষ্কার করেছিল সম্রাট আকবর আর আমি ক্লাস এইট থেকেই তোমার নামে একটা পুঞ্জিকা রাখার কথা ভাবছি। কিন্তু সম্রাট আকবরের মতো কোন নাম দিতে পারিনি। সবাইকে জানাতেও পারবনা কারণ আমি তোমার মায়াতে খুবি ভীতু তাই পুঞ্জিকার উৎসব শুধু তোমাকে ঘিরেই আমার মাঝে ঘুরে।
আমি প্রকৃতির নিয়মে রত্নসেন হয়ে উঠলাম কিন্তু হিরামন পাখিটি পাইনি। যে পাখিটি তোমার সব খবর আমাকে জানাবে।জানাবে তোমার কাকডাকা ভোর থেকে অক্তিম সূর্য্য। সকালের ধোয়া উঠা চায়ের কাপ তোমার হাতে ভালো মানায় নাকি জানালার ফাকে মিষ্টি রোদ আর ঘুম ভাঙা চোখে আকিবুকি খেলার ছলে মেতে থাকাটা বেশি মানায়। নাকি দিনের প্রথম আলোয় ঘুম কাতর চোখে প্রথম হাই তোলা ঠোট আর চোখকে বেশি ভালো লাগে। দুপুরের তপ্ত রোদে পুকুরের পুটি মাছের জল খেলা ভালো লাগে নাকি তোমার উষ্টদেশে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলোই বেশি ভালো লাগে। বিকেলের সোনালি রোদে ধানের শীষে দোল খাওয়া ভালো লাগে নাকি দখিনা হওয়ায় তোমার খোলা চুলের কপাল ছুয়ে যাওয়া বেশি ভালো লাগে। অক্তিম সূর্যের লাল আভার বাকটাই সুন্দর নাকি তোমার ঠোঁটের চিকন বাকটা বেশি সুন্দর। রাতের আকাশে সূর্যের আলো আর ঝিলের পানির যে ছন্দ, তা কি তোমার উষ্ঠের চেয়েও দামি, জোনাকির স্পর্শে রাতের সাদা কদম ফুলের যে হাসি তার চেয়েও কি তোমার হাসি কম? রাতের আকাশে চাঁদ না বলে সূর্য্য বললাম, এটা কেমন বোকামি? তুমি কি দেখেছ দিনের বেলাতেও চাঁদ দেখা যায় কিন্তু যার কোন আলো কাউকে প্রভাবিত করে না অথচ রাতে তার পূর্ণ সৌন্দর্য্য নিয়ে পৃথিবীর বুকে প্রেমে জাগায়।এ আলো কোথায় পায় বলতো? সূর্য্যর তাপে ঝলসে গিয়েছে চাঁদ।চাঁদের বড়াই রবির আলোয়।যেটা আমার কাছে ঝলসানো সূর্য্য। তোমার দীপ্ত আলোয় আমিও ঝলসে যেতে চাই।
আমি তোমাকে কখন সাজতে দেখিনি, তোমার চোখজোড়া মায়ায় মাখা হরিণমৃগ। একটু মিথ্যা বলে ফেলছি হঠাৎ কবিত্ব জেগেছিলতো তাই, তোমার চোখের দিকে তাকাবার সাহস কোনদিন আমার হয়ে উঠেনি। তবুও তোমার চোখের আলোয় আমাকে ঝলসে দিয়েছো আর ভালো হতো যদি আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে। পুড়ে ছাই কেন যদি শিমুল করে দিতে কোন এক চৈত্রে আমি বাতাসে ভেসে তোমার উঠোনে পড়তাম আর তুমি সযত্নে তুলে আমাকে বালিস করতে। আমি পুড়ে ছাই হতে চাইনা আমি শিমুল তুলা হতে চাই। না থাক এতোটুকু ভাবনা আমি করতে পারি না, এমনিতেই তুমি আমাকে ঝলসে দিয়েছ। ঝলসে গিয়েছে পুরো শরীর তারচেয়ে বেশি ঝলসে গেছে বুক।বুকে হালকা প্রলেপে শুধু হৃদয়টাই আছে যেখান থেকেই উকি দিয়ে তোমাকে নিয়ে খুব বেশি ভাবায়। বুকটা এতো বেশি না ঝলসে গেলে হয়তো এত ব্যাকুল আমি হতাম না তাই এখনি আমি হৃদয়টা ঝলসাতে চাই না। তোমার কথা ভাবলেই বুকে কম্পনটা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকশ গুন বেরে যায় তখনো কত শত প্রশ্ন মনেই রয়ে যায়।
অনেক রাত আমি জেগে পার করেছি যখন ওই ঝলসানো সূর্য্য তার সমস্ত রুপ নিয়ে আমার সামনে আসে তখন আমার মনে হয় তুমি চাঁদ দেখ। দূরত্ব যতই হোক তোমার আমার চাঁদ তো একটাই। আমি আর ঝলসানো সূর্য্য দেখতে চাইনা আমিও চাঁদ দেখতে চাই। আমার আকাশে কবে তুমি উঠবে বলতো?
এখন আমার ডাকহরকরা হলো তোমার দেখা চাঁদ। তুমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর পড়েছ? আমার ও ইচ্ছে করে অমলের মতো ডাকহরকরা হতে। তোমার মায়ায় আমি ঘরবন্দি, রুগ্ন। হিমালয় থেকে এক কবিরাজ এসেছিল আমাকে বলেছে তোমার মায়ার ঘরবন্দি থেকে যেন আমি না বের হই। তাই চাঁদকে আমি ডাকহরকরা বানিয়েছি আমার ইচ্ছে, স্বপ্ন সব কথা ডাকহরকরাকে বলে দেই যেন তোমার ঠিকানায় পৌছে দেয়। কত বার ডাকহরকরা মিটি মিটি লন্ঠন নিয়ে এসে আবার চলেও যায় একবারও তোমার কোন কথাই আমাকে বলেনি। আমি কত শতবার জানালায় মাথা রেখে ডাকহরকরার যাওয়া আসা দেখেছি ভোর রাত অবধি কিন্তু কোন চিঠি আমি পাইনি। তবে লন্ঠনের আলোতে তোমার বাড়ির রাস্তাটা চিনে রেখেছি, অনেক রাত আমি লন্ঠনের আলোয় দূর থেকে তোমার জানালায় চোখ মেলেছি, কিন্তু একবারের জন্যও তোমাকে দেখতে পাইনি। আমার এখন ডাকহরকরার সাথে আঁড়ি।আমি একদিন ডাকহরকরা হব আমার সমস্ত চিঠি নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াব। তোমার কাছে না গেল ডাকহরকরা না পেলাম হিরামন। এই সব ভেবে ভেবে আমি নিজেই চাতক পাখি হয়ে গিয়েছি। মনে পড়ে গেল সেই গানের কথা-
দেখ চাতকের রীতি মেঘের সাথে তার পিরিতি
জল পিপাসায় মইরা গেলেও অন্য পানি পান করে না।
আমি এখন বালিকার নাম জানি না? এতো দিন ধরে শুধু তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেই যাচ্ছি অথচ বালিকার নামটি জানা হয়নি। নাম তার যাই হোক তাকে আমি বাকা বাবু বলে ডাকি।বাকা বাবু বলার পিছনে সুন্দর একটা গল্প আছে। তার কাঁধে অনেক ভারি একটা ব্যাগ। আহ.. কি কষ্ট করে কুজো বুড়ির মতো লম্বা লম্বা পা ফেলে হাটতো। দেখে খুব হাসি পেত অবশ্য খারাপও কম লাগত না।
সেইদিন বালিকার আসার সময় ছিলনা হঠাৎ এক বন্ধু আমাকে বলল রাবেয়া যাচ্ছে। আমি চিনতে পারিনি, রাবেয়াটা কে? পিছন ঘুরে দেখি একটি বালিকা। অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম বালিকার যাবার পথে। বালিকা যাবার পর ধরে প্রাণ ফিরে এলো কিন্তু আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি যে বালিকাকে দেখি সেটা তো কারোরি জানার কথা নয়। একটি সুন্দর তথ্য নিয়ে মাথার জট খুলল এতোটুকু বুঝলাম মেয়েরা জন্ম থেকেই মনোবাহাওয়াবীদ। এরা মনের আবহাওয়া খুব ভালোই বুঝে। বোধ হয় রত্নসেন পেল তার হিরামন। এই বন্ধুটাই হিরামন। একদিন সময় করে জানতে চাইলাম বালিকার ব্যাপারে। অনেক ঘেটে ঘুটে মনে হলো আমি শুধু খালি কলসিই বাজাচ্ছি। না কোন সুর না কোন তাল, তাইরে নাইরে নেই রে না। বুঝলাম এ ছিল কাকপক্ষী। কোন তথ্যই বালিকার ব্যাপারে জানেনা নামটি ছাড়া। খালি কলসিতে ঠোঁট লাগিয়ে একটা শব্দ করেছে মাত্র। একটা শব্দ ও যে একটা সুর তা কিন্তু এই কাকপক্ষীই বের করেছে এরপর থেকেই আমার প্রেয় পাখি কাক। সকাল বেলায় আমার কাকের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। কাকও আমার জন্য দরদ দিয়ে সুর করে গান গায়। সেই সুরটাই মনের মধ্যে বেজেই যাচ্ছে। রাবেয়া, রাবেয়া, রাবেয়া। বালিকার নাম তো পেলাম আর কিছু জানারই বা প্রয়োজনটা কিসে। রাবেয়া আমি কিন্তু বাকা বাবু নামটি ভুলি নাই।মনের মাঝে কাক পক্ষি সুর ধরেছে, মনের সুখে একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে-
ছেলেটা দৌড়ে দৌড়ে এসে হাঁপায়
স্কুলের বাসটা হর্ন দিয়ে যায় তিনবার
মেয়েটা দৌড়ে দৌড়ে চলে যায়
স্কুলের ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিয়ে ছেলেটা
হাঁপাতে হাঁপাতে আবার হাঁটা দেয়
আমার ছেলেমানুষি মন আঁকড়ে ধরে রেখে
আরও একটা ভালোবাসার গান
গানটা আমার লেখা নয় শিল্পী অঞ্জন দত্তের গান এটি। আমার জন্যই বুঝি গেয়েছেন মিছে মিছে সান্তনা দেবার জন্য। তবুও যদি তার আর আমার ভাবনাগুালো অঞ্জন দত্তের ভাবনার মতোই হতো। এই মুহূর্তে আরো একটা গান মাথায় চলে আসছে সাথে বিরহে মনটাও ভরে যাচ্ছে। না থাক আর কোন গান নয়। সেদিন সেলিম ভাইকে বললাম সেলিম ভাই, এই রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ে যায় সাদা স্কুল ড্রেস পড়া মেয়েটাকে চিনেন? সেলিম ভাই পেশায় মুদি দোকানদার। শুধু এই এলাকা নয় আশে পাশের দুই চার এলাকার সব মেয়েদেরকেই তিনি খুব ভালো করে চিনেন এবং জানেন। শুধু মেয়ে কি বয়স, গায়ের রং, হাটাচলা সব তার জানা বলতে গেলে মেয়ের নাড়ি নক্ষত্র সব তার জানা। মনে হয় মেয়ের মা নাড়ি কাটার সময় তাকে খবর দিয়ে যায় সাথে মহাআনন্দে মেয়ে নাম কি রাখা হবে সেটাও জেনে যায়। তার আরো একটা ছোট্ট পরিচয় আছে ”পেঁচা ঘটক”। পেঁচা ঘটক বলার পিছনে সুন্দর একটা ব্যাখা আছে। সারাদিন দোকানে বসে ঝিমায় আর ডেপ ডেপ করে তাকিয়ে থেকে ভাবে। এটাও তার একটা গুনই বটে সবাই কোন বিষয়ে ভাবার সময় চোখ বন্ধ করে ভাবে আর সেলিম ভাই নিম গাছে বসা পেঁচার মত করে তাকিয়ে থেকে ভেবেই যায়। কোন মেয়ের সাথে কোন পাড়ার কোন ছেলেকে বিয়ে দেয়া যাবে, কোন ছেলে মেয়ে কি ঘটনা ঘটালো। এই সব চিন্তায় মগ্ন থেকেই সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে, সাথে সাথে তার বিয়ের ঘটকালিগুলোও শেষ হয় আবার পরদিনের শুরু চিন্তায়।তার আরো একটা ক্ষমতা আছে তার আগে বলি পেঁচা ঘটকের দোকানে দুই ধরনের ক্রেতা নাইন টেনে পড়া ছেলে আর পাড়ার বৃদ্ধরা। ক্রেতাগণ পেঁচা ঘটকের খুবই ভক্ত। গ্রামের বৃদ্ধরা পত্রিকা পড়তে জানে না পেঁচা ঘটকই তাদের পত্রিকা কিন্তু বৃদ্ধদের দেশ বিদেশের খবর জানার কোন আগ্রহই নেই তারা জানতে চায় কার ছেলে কোন নৌকার মাঝি হয়ে নৌকা চালাচ্ছে। কার মেয়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় কতদূর গিয়েছে।সেলিমও চায়ের কাপে বাজনা তুলে শুরু করে গল্প। চায়ের সাধেও তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই শুধু গল্প ভালো হলেই হলো। মজার ব্যাপর হলো এই বৃদ্ধরা কোন গল্পই ঠিক করে মনে রাখতে পারে না পর দিন এসে আবার সেইপুরোন গল্পের সুর ধরে। অল্প কিছু গল্পেই সেলিমের কাজ হয়ে যায়। ২য় সারির ক্রেতা হলো ক্লাস নাইন টেনে পড়া ছেলেগুলো। দশটা থেকে চারটা অবধি ভিড় করে রাখে। কারণ একটাই কেবল তার কাছেই সকল মেয়েদের খবর থাকে। নাম ঠিকানা পরিচয় সব তার কাছে পাওয়া যায় যেটা পাওয়া যায়না সেটা হলো ফোন নম্বর। পেঁচা ঘটকের বিশেষ এক যুক্তি আছে ক্রেতার কাছে সব পণ্য বিক্রি করতে নাই কিছু পণ্য দোকান সাজাতে রাখতে হয়। এই সাজানো পণ্যের মধ্যে একটি হলো ফোন নম্বর। সে ক্রেতা ধরে রাখার জন্য বিশেষ এক ব্যবস্থাও রেখেছে প্রেমিক প্রেমিকার চিঠি সংগ্রহ। প্রেমপত্র আদান প্রদানের ডাক বিভাগ তার কাছেই।তার একটি স্বপ্ন আছে কোন দিন সে ডাক বিভাগে চাকরি পেলে সে ডাক পিয়ন হবে। তবে সে অন্য কোন চিঠি আদান প্রদান করবেনা শুধু প্রেমের চিঠি নিয়েই কাজ করবে। ঠিকঠাক মত চিঠিগুলো হাতে না পড়ার কারণে কত প্রেমের অবসান যে ঘটে তা একমাত্র সেলিম পেঁচাই বুঝে। আরো একটি শখ হলো সে সবার চিঠি পত্রগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে প্রিয় থেকে শুরু করে ইতি অবধি। এই চিঠি পত্র পড়ে তার একটা গবেষনার ফল বের হয়েছে বাংলাদেশে লিপস্টিকের ব্যবসা অনেক ভালো। যে হারে মেয়েরা চিঠিতে লিপস্টিক খরচ করে তাতে তাদের অনেক লিপস্টিক খরচ করতে হয় এতে করে শখ আল্লাদের অনেক টাকা মেয়েরা লিপস্টিক কেনার পিছনে ব্যয় করে। এই ভেবে পেঁচা ঘটকের অনেক কষ্ট হয় সে ঠিক করেছে এই সব মেয়েদের জন্য সে একটা সমবায় সমিতি করবে।নাম হবে ”লিপ সমবায়” সুদ বিহীন ঋন নিয়ে মেয়েরা লিপস্টিক কিনে চিঠি লিখবে। সেলিম ঠিক করেছে আপদত দোকানে অনেক ধরনের লিপস্টিক রাখবে তবে লাল লিপস্টিক চাহিদা একটু বেশি। পরে আস্তে ধীরে এই সমবায় সে গড়বেই। বাজারে প্রেমের দর এখন ভালো।
সেলিম ভাই গড়গড় করে বলতে লাগল ওই তো শ্যাম বর্ণ মেয়েটি পাশের গ্রামেই থাকে আবুলের মাইয়া, মাইয়াডা বেশ ভাল, ক্লাস টেনে পড়ে বাপের অনেক জমি জমা আছে। আমার মামাতো শালি। তোমার কাছে কোন সমন্দ থাকলে বল দেখি কথা বলে। আমি অবশ্য বললে মেয়ের বাপ ফেলতে পারবোনা। তা মিয়া ভাই বলতো পোলাডা কে?
আমি হতাশ হয়ে সেলিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সেলিম ভাই আমার দূরসম্পর্কে আত্মীয়। তাকে মাথামোটা বলতে চাইলেও নিজেরই লাগে অবশ্য আমি নিজেও মাথামোটা। নয়তো এমন প্রশ্ন কেন করলাম সাদা ড্রেস পড়া মেয়েটা। কত মেয়েই তো সাদা ড্রেস পড়ে স্কুলে যায়। এতে সেলিম ভাইয়ের দোষ নাই। প্রশ্ন উত্তর দুটাই ঠিক আছে। আমি আবার সেলিম ভাইকে বললাম ভাই আমি অন্য মেয়ের সম্পর্ক জানতে চাচ্ছি। আপনাদের বাড়ির পিছনেই ওদের বাড়ি এবার চিনছেন। সেলিম ভাই আমার দিকে যে দৃষ্টিতে তাকালো তাতে আমি লজ্জাবোধ করছি। সেলিম ভাইয়ের সাথে আগে কখনোই কোন মেয়ে বিষয়ে কথা হয়নি। আজই প্রথম তার সাথে আমার কথা তাও আবার তার পাশের বাড়ির মেয়েকে নিয়ে। যাই হোক ঘটক বলে কথা তার একটা দায়িত্ব তো আছেই।
সেলিম ভাই সবজান্তার মতো বলতে লাগলো তুমি রাবুর কথা বলছ? আমি এবার আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। সেলিম ভাইয়ের এতো সুনাম আসলেই মিথ্যা সে কোন কাজেরই না আজাইরা বক বক ছাড়া কিছুই পারেনা। সেলিম ভাই মেয়েটির নাম রাবেয়া। সেলিম ভাই একখানা দন্তহস্তি হাসি দিয়ে বলল মনে হলো বিশেষ কিছু উদ্ধার করতে পারছে। শুনেন মিয়া ভাই রাবেয়া নামে এই পাড়ায় কেউ নাই। রাবু নামে আছে ওরা দুই ভাই বোন বাবা কলেজের প্রফেসর, মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। আপনি কি ওর কথা বলছেন। মনে হলো আলাদীনের চেরাগে ঘসা খেয়ে দৈত্য বের হয়েছে। বালিকার ভারি ব্যাগটার বেশ নাম আছে দেখি। একবাক্যে বলে দিল তবে আর কোন ব্যাপার নাই মিয়াভাই। আপনে যে মাইয়ার কথা বলছেন ওর নাম রাবু। আমার ঠোঁটের কোনায় হাসির একটা রেখা ফুটল। বুকের ভিতরে একটা হওয়া বইছে শির শির করছে মনে হচ্ছে হৃদয় বাগিচার কলিগুলো পাখা মেলবে। সাত রং ঢলে পড়বে ফুলের উপর তার মধ্য থেকে একটি প্রজাপতি এসে জড়িয়ে বসবে ফুলের ডানায়।
রাবু! নাম যাই হোক তুমি কিন্তু বাকা বাবু। যাক প্রথম নাম তোমার ভুল হলেও অনেক গুলো তথ্য ও ব্যাগ ভর্তি প্রমান নিয়ে মানে তোমার ব্যাগের কথা বলছি এটাই প্রমাণিত হলো তুমি রাবু। তবুও তুমি রাবেয়া নাকি রাবু। ভাবনার ঘোর না কাটতেই সেলিম ভাই ডেকে বলল মিয়া ভাই শোনেন আপনারে একটা গল্প কই।
কেয়াপাতা নামে একটা চিঠি আসতো আমার কাছে অবশ্য চিঠিটা আমার না নাইনে পড়া একটা ছেলের কাছে নাম তরী। তরী? মিয়া ভাই এইটা চিঠির নাম বলছি ‘কেয়াপাতার তরী’ । মেয়েটার চিঠির ভাষাগুলো খুবই সুন্দর ছিল। চিঠিটা খুললেই কাচা গমের শীষের গন্ধ পাইতাল। খুব ইচ্ছে করত যদি কেয়াপাতাকে গমের সোনালি ডাটায় ফ্রেম বন্দি করতে পারতাম। কিন্তু আমার তো একটা নীতি আছে কি কন মিয়া ভাই? একটু দম নিয়ে সেলিম ভাই আবার বলা শুরু করল জানেন মিয়া ভাই পোলাডা একটু বোকা ছিল তাই চিঠির উত্তরগুলো আমাকেই লিখে দিতে হতো। এভাবেই চলল ছয় মাসের মত। পোলাডা বাপ ঢাকায় চাকরি করে তাই পোলাডারে ঢাকায় নিয়ে গেল ওইখান থেকেই নাকি পড়াশোনা করবে। তিন দিন পর কোন উত্তর না পেয়ে মেয়েটি একখানা চিঠি লিখছে। তিন দিনেও কি সময় হলো না চিঠিটা পড়ার। অমনি আমি চিঠিটা বের করে পড়লাম আর উত্তর লিখলাম কাল মেয়েটি চিঠিটা নিয়ে যাবে। সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না মিয়া ভাই। কেন জানেন? এই প্রথম চিঠিটা আমার নিজের জন্য লিখছি। মেয়েটাও খুব চালাক বুঝলেন মিয়া ভাই। সেলিম ভাইয়ের কথায় কথায় মিয়া ভাই ডাকটা আমার খুব পছন্দ। সেলিম ভাই বলল ভাবেন কি মিয়া ভাই আমার কথা শুনেন। মেয়েটা খুব চালাক। সেই চিঠির উত্তর দিল আগের চিঠিগুলোই তো বেশি সুন্দর, আমি চিঠির ছন্দ পতন চাচ্ছি না। কেয়া পাতায় আপনি একটা নৌক বানাবেন? বুঝলেন মিয়া ভাই আমি তো অবাক হয়ে গেলাম এই প্রথম মেয়েটা আমারে আপনি লিখছে। তার মানে আমি ধরা খেয়ে গেছি। অনেক গুছিয়ে একটা চিঠি লিখলাম সারা রাত ধরে। কিন্তু পরদিন মেয়েটা চিঠি নিতে আর আসলই না। আর কোন দিন সে চিঠি নেয়নি।
সেলিম ভাই এবার দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল বিয়ের রাতে বললাম চিঠিটা তো এখন নিলে না। অনেক কষ্ট করে সারারাত ধরে লিখছি। আপনার ভাবি কি কয় জানেন আমি তো এখন ফ্রেম বন্দি চিঠির আর প্রয়োজন নাই। মিয়া ভাই দাড়ান চিঠিটা আপনারে দেখাই। সেলিম ভাই আজ না অন্যদিন আমার এখন একটু উঠতে হবে। সেলিম ভাইয়ের চিঠিটা পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু এখনি রাবু চলে আসবে। সেলিম ভাইয়ের হাসি মুখ যে একটু ম্লান হয়েছে তা আমি বুঝেছি বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে গেছে কিন্তু চিঠিটা তাকে মুক্তি দিলনা আজও। রাবু নামটি বলে দোকন থেকে বের হয়ে রাস্তায় পা রেখে আবার বললাম রাবু। কোন এক শক্তি আমাকে সামনে পা ফেলার শক্তি কেড়ে নিয়েছে আমি আর একপাও সামনে নিতে পারছিনা। আমি যেন একটা জীবন্ত মুর্তি। তিন সেকেন্ডের একটা দমকা হাওয়া আমাকে আবার সতেজ করে তুলল। এই মাত্র যে হাওয়ার আর্বিভাব হয়েছে তা রাবুর থেকেই উৎপত্তি। এই কুঁজো বুড়ি যাদু জানে মানুষকে মুর্তি বানাতে পারে, শক্তি কেড়ে নিতে পারে। আচ্ছা দৃৎপৃন্ডটা বুকের মধ্যেই আছে তো? হা এই তো মাইলের পর মাইল দৌড়ে আমার কাছেই ফিরে আসছে।
নামে পর্ব এখানেও শেষ হলো না
পুরনো মানুষ গুলোই আমার কাছে ফিরে আসছে নতুন নতুন রুপে। প্রেমদূত মশাই এসেছেন এক বার্তা নিয়ে আমাকে দেখেই তিনি বুঝে ফেলেছে আমি কারো প্রেমে পড়েছি। তার ধারণা ছেলেরা প্রেমে পড়লে স্থির ভাবে কিছু দেখতে পারেনা, চোখ খুবই ভীতু হয়ে যায় চোখ এদিক ওদিক শুধু ছোটাছুটি করে। আমার মধ্যেও নাকি এই সব লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। এতো লক্ষণ প্রকাশের পরেও কেবল আমি নিশ্চত নই এটা প্রেম। আমার কাছে তো তোমাকে দেখতেই শুধু ভালো লাগে, ভালো লাগে তোমার বোকা বোকা মুখটা, ঘামে ভেজা ঠোঁটটা। বলতো প্রেমে পড়লাম কিভাবে? না এটাই নাকি প্রেম। অনেক ভাবে অনেক তত্ত্ব উপাত্ত দিয়ে এমনকি কালজয়ী কিছু কাহিনী বলে প্রমান দিল এটাই প্রেম। আমার শুরুটা নাকি উত্তম কুমারের ছবির মতই। নিয়াত যে বানিয়ে বাড়িয়ে কথা বলতে পারে তাতে আমাদের কারোই কোন সন্দেহ নাই কোন দিন ছিলও না। কি কারণে যেন আজ নিয়াতের সব কথাই ঠিক মনে হচ্ছে। নিয়াতকে প্রশ্ন করলাম এই উত্তম কুমার কে? গাল ভরা হাসি মেখে উত্তর দিল তুই তো দুনিয়ার কোন খবরই রাখিস না। বলদের কয় নাম্বার বাচ্চা তুই জানিস? সত্যিই কি আমাকে খুব বলদ মনে হচ্ছে। ঠিক আছে তোকে একদিন উত্তম কুমারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। এতো টুকু জেনে রাখ উত্তম সুচিত্রার প্রেমে ডুবে আছে। যেখানে উত্তম কুমার আর সুচিত্রার সাথে মিলে যায় সেখানে কি আর বলার থাকে। এবার আসল কথায় আয় রুমুকে যে ভালোবাসিস এটা তো সত্যি নাকি?
এই রুমুটা আবার কে? আমি যাকে চিনি তার নাম তো রাবু। রাবুকেই তো দেখি কিন্তু আমার মাথায় আসছে না কেন তুই এটাকে প্রেমের দিকে নিচ্ছিস। তুমি জানো ব্যাঙের ছাতা। সালা প্রেমে পড়েছিস কিন্তু মেয়ের নাম জানিস না। নিয়াত প্রমাণের ভিত্তি আরো মজবুত করতে বলল রুমু মা আমার টিচার। রুমু ওর মায়ের সাথে অনেক বার ওই স্কুলে গিয়েছে খুবি বোকা কেবলা কান্ত। বোকা আর কেবলা কান্ত কথাটা শুনে আমার মনে একটা ধাক্কা দিল। রাবেয়াও নয় রাবুও নয় ওর নাম রুমু। সত্যি এবার তোমার কাছে থেকেই জানতে ইচ্ছে করছে তুমি কে? সব শেষে মেনে নিলাম তুমি রুমু। এরপর এখন অবধি আর কোন নাম পাইনি আর ভাবিও নি। বৈজ্ঞানিক ভাবে তিনটি প্রমান মিললেই নাকি সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। আমিও তিনটি প্রমাণ পেলাম।
নাম বদলানোর সাথে সাথে যে তুমি পাল্টে যাচ্ছনা এটাই বা কম কিসে। প্রেমে যখন পড়লাম এবার তোমাকে প্রোপস করতে হবে এটা প্রেমের প্রথম ধাপ। প্রোপস করাকে জমিতে বীজ বোপন করাও বলা যেতে পারে। আদর্শ কৃষকের মতে বীজ বপনের পর থেকে যত্ন নিতে হবে রোদে পুরে বৃষ্টিতে ভিজে পরিচর্যা করতে হবে।মাটি ফেটে অঙ্কর তার পর সবুজ দুটি পাতা যেন দুই জোড়া চোখ দুজন দুজন কে অপলক দেখেই যাচ্ছে কেবল আমি আর তুমি।
আমার ক্লাস এইট প্রায় শেষ। এরপর আমি নতুন এক ক্লাসের নাম জানলাম ক্লাস নাইন। রুমু এখন সিক্সে যাবে। পদ্মাবতীর রুপ এখন কেমন হবে?
ভর দুপুর টিভিন টাইম চলছে। রুমু ব্যাগ কাঁধে গুটি গুটি পায় হেটে আসছে। যেন রাধা মিষ্টান্ন ভার নিয়ে হাটে যাবার বেলায় কৃষ্ণ চক্ষু যে অপেক্ষায় কেবল একটি বার রাধার কন্ঠস্বর শুনবে বলে। কৃষ্ণরা সব সময় সর্বকালেই বোকা হয়। নিয়াত আমাকে বুঝিয়েছিল উত্তম কুমার আর সুচিত্রা। সমস্যা হলো আমি তো উত্তম কুমারকে পুরোপুরি চিনি না। সে যাই হোক সহজ কথা রুমুর সামনে দাড়িয়ে বলে দিতে হবে আই লাভ ইউ। আমল্যকূলে বসে যাবে মৌমাছি, হিজলের বনে বইবে দমকা হওয়া। প্রেমদূত বলল এইটুকু বললেই প্রেম প্রকাশ পাবে প্রেমের বীজ বপন হয় যাবে তারপর তুই হবি চাষি। আহ.. প্রেমে পড়ে কতজন চন্ডীদাস হয় কেউবা হয় দেবদাস আর আমাকে হতে হবে চাষী। তবে চাষী হওয়া অদ্ভত আনন্দ আছে প্রত্যেক চাষীই প্রেমিক প্রেম তাদের অঙ্গ প্রতঙ্গে শিরায় শিরায়।
হাতে কোন গোলাপ নেই, নেই কোন গিফ্ট বক্স। চোখে ভয় বুকের হৃদপিন্ডে ঝাকুনি, নাকের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম এতটুকু নিয়ের রুমুর সামনে। না দাড়াতে পারিনি শুধু পাশ থেকেই বললাম রুমু! আমি, আই.....................। সেই বাকরুদ্ধ সেই তৃষ্ণা নিয়ে কাটছে ১২টি বছর।
সেদিনই বুঝলাম ভালোবাসা যত সহজ, তার থেকেও খুব বেশি সহজে থেমে যায় কন্ঠস্বর, খুব সহজেই হৃদপিন্ড থেমে যেতে চায়। আমার সব কিছু আমার বিরুদ্ধে কাজ করে কেবল প্রতিনিয়ত আমার মন আমাকে ভরসা দেয় সাহস দেয়। আজ আমার মনকে আমি খুব ভালবেসে ফেলেছি। আমি বুঝতে পারলাম আমার একটা হাত যদি না থাকে কেউনা কেউ তার হাত দিয়ে আমাকে সাহায্য করবে। আমার যদি দুটি চোখ না থাকে তবুও কেউনা কেউ তার চোখ দিয়ে আমাকে পৃথিবী দেখাবে, আমার যদি একটা কিডনি না থাকে কেউ না কেউ তা আমাকে দিবে। কিন্তু আমার কন্ঠ যদি আমার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে তবে পৃথিবীর কারো স্বাধ্য নাই যে আমাকে তার কন্ঠ দিয়ে দিবে। মানুষের সব থেকে দামি বস্তু তার কন্ঠস্বর। আমি এই দামি বস্তুটাও অবলীলায় হারাতে চাই তার আগে শুধু একটি বার তোমাকে বলতে চাই ভালবাসি, আমি তোমাকে ভালবাসি রুমু।
রুমুর গায়ের গন্ধ যত দূর যায় ততদূর থেকেই আমার হাত পা কাঁপতে থাকে, আমার চোখ আমাকে এক ক্রোশ দূরে সরিয়ে নেয় আমি তাকে ঝাপসা চোখে দেখি। আমি খুবই ভীতু। ভীতু আমার চোখ, ভীতু আমার হৃদপিন্ড, ভীতু আমার শ্বাস তন্ত্র।
তবে চেষ্টা কিন্তু আমি করেই চলছি। তোমাকে যে ভালোবাসি এটা কারো সাথে বলতেও পারিনা। তোমার কথা মনে হলেই হ্যার্ট বিট বারতে থাকে কথা বলতে চাইলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যায়। আমি কথা ভালোই গুছিয়ে বলতে পারি তার বেশ কিছু প্রমান থাকায় নিজেকে মানাতে পারিনা যে আমি বলতে জানি না। এই যে না পারাটা এটাতে আমি শুধু এতোটুকু ভাবি, তোমাকে বলার জন্য যে পরিমান ভালোবাসা প্রয়োজন ততটুকু বোধহয় হয়নি বলেই বলতে পারি না। তবে আমি কিন্তু বলতে পেরেছি তোমার যাবার পথের দিকে তাকিয়ে তোমার গায়ের যে গন্ধটা আমাকে জানান দিতো বলে গেল ”তুমি বড়ই ভীতু”। আমার মন বলতো-
ভালোবাসিস আর নাই বাসিস
আমি কিন্তু তোকে ভালোবেসেই যাব
তুই কি আমার সঙ্গচিল হবি?
ইচ্ছে হলে থাবা দিবি আবার ইচ্ছে হলে উড়ালও দিব
তৃষা পেলে আমার বুকেই মুখ লুকাবি।
তুমি যে রিক্সায় চলাচল করতে ওই রিক্সাওয়ালার উপর দুটি কারণে আমার খুব রাগ হতো। প্রথমত সে খুব জোরে রিক্সা চালাতো দিতীয়ত্ব রিক্সার ফুটটা তোমাকে এমন করে ডেকে রাখতো মনে হতো কোন দৈত্য রাজকন্যাকে পাহাড়া দিচ্ছে। তবে প্রতিটা ভ্যান আমার খুব প্রিয়ছিল। প্রিয় ছিল ব্রিজের উচ্চতা, ভালো লাগতো মোড়ের দোকান গুলো। প্রায়ই তোমার পায়ের প্রতি অনুরাগ জন্মাতো কেন ওই পা জোড়ার এতো তাড়াহুড়ো। তোমার পায়ে নুপুর বা পায়েল না যদি কখনো সুযোগ হতো আমি তোমার পায়ে বেরি পড়াতাম। সেদিন ভোরে আমার খুব জিদ হয়েছিল রুমুর পা কত হাটতে পারে সেটা দেখার জন্য। রুমু বাড়ি থেকে আসছিল এমন সময় কাকতালিয় ভাবে রাস্তায় কোন রিক্সা ছিলনা কেবল একটাই ভ্যান। রুমুকে হাটিয়ে নেবার জন্য আমি ভ্যানটাতে উঠে যাই আর সে হেটেই পথ হাঁটছিল কিন্তু আমার তাতে মনে হলো আমার জিদটা তাকেই বেশি কষ্ট দিচ্ছে রুমুর হাটতে যতটা না কষ্ট হচ্ছিল তার থেকে আমার বেশি কষ্ট হচ্ছিল। অনেক সাহস নিয়ে তাকে পিছন থেকে ডাকলাম এই, ভ্যানে উঠো। মনে হচ্ছিল সে উঠতে চাচ্ছেনা তাই একটা ধমক দিয়েছিলাম। প্রতিটা স্মৃতি যেন কথা বলে। তোমার সাথে প্রতিটি ঘটনা হৃদয়ে বুনন তোলে।
রুমু যে রিক্সাতে রোজ যাতায়াত করত খুব কষ্ট করে তাকে ম্যানেজ করলাম। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটা চিঠি দিয়েছিলাম রুমু দেয়ার জন্য। রুমু যে চিঠিটা সরাসরি নিবেনা তা জেনেই দিয়েছি একটু বুদ্ধি করে রিক্সাওয়ালা বলতে বলেছিলাম আপু কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি একটি মেয়ে আমাকে চিঠি দিয়েছে কিন্তু আমি তো পড়াশোনা জানি না আপনি যদি আমার চিঠিটা পড়ে বলতেন এই খানে কি লেখা আছে। প্রথম চিঠি রুমুর জন্য অনেক কষ্টে কয়েক পাতা লিখতে পুরো একটা ডায়রি শেষ করেছি। শেষমেশ কেটেকুটে ৫ পাতার একটা ঘামে ভেজা চিঠি হলো, রোদে শুকিয়ে চিঠির পাতা শক্ত করে প্রেরণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই সময় তো মনে হচ্ছিল আমি পুরো একটা রাজ্য জয় করে ফেলেছি। বীর সেনার মতো রুমুর হাতে পাঠালাম চিঠি। অপেক্ষায় রইলাম রুমু পড়ল কিনা। খুবি অবাক হয়ে দেখি সে রিক্সাওয়ালার কোন পাত্তাই নেই। আর চিঠিটা রুমুর হাতে পড়েছে ভেবে আর তার সামনে যাবার সাহসই করতে পারছিনা। পুরো তিন দিন পর সেই প্রতিক্ষীত মানুষটাকে পেলাম। খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলাম রুমু চিঠিটা পড়েছ কিনা। সে উত্তর দিল রুমুর নাকি খুব অসুস্থ তাই আর স্কুল প্রাইভেট যাচ্ছে না। কথাটা শুনে খুবি খারাপ লাগলো এই কয়দিন আমি তার খোঁজই নিতে পারিনি। জানতে চাইলাম কবে থেকে সে আবার স্কুল যাবে। বলল পরশু দিন থেকে যাবে বলেছে। মনটা খুব খারাপ তারপর সারাদিন আর বাড়ি থেকে বের হলাম না। সন্ধ্যায় একটা কল আসলো রুমু নাকি বাজারের দিকে যাচ্ছ। কে রুখে আর আমাকে সোজা একটা দৌড় আর ৫মিনিটে বাজার ৪মিনিটে তুমি যে এরিয়াগুলোতে থাকার কথা সব দেখা শেষ কিন্তু রুমু নাই। বাজারের সব ঠিক আছে। ক্রেতা বিক্রেতার কথা কাটাকাটি, ভাপা পিঠার দোকান, রিক্সার টিং টিং শব্দ পুরো বাজারই ঠিক ঠিক কিন্তু যার থাকার কথা ছিল শুধু সেই নেই। এক নিমিশে বাজার তার রুপ হারিয়ে ফেলেছে। বের যখন হয়েছ বাড়ি তবে ফিরবেই। নদীর পাড়ে ৫টা থেকে ৯টা অবধি বসে রইলাম তার ফেরার পথে। রুমু গিয়েছে তার নানু বাড়ি তার মামাতো বোনের সমন্ধ এসে তাই পরিবারের সবার ডাক পরেছে তার থেকে বড় কথা আমিন সাহেবের শশুর বাড়িতে খুব ভালো কদর আছে। আমিন সাহেবকে না জানিয়ে তারা কিছু করে না। আমিন সাহেব হলেন রুমু বাবা। রুমুর বাবা খানিকটা বদমেজাজি পাড়ার কোন ছেলে মেয়ে সে দুচোখে দেখতে পারেনা। তেমনি পাড়ার ছেলে মেয়েরাও তাকে দেখলে ১০ হাত দূর দিয়ে চলার চেষ্টা করে। এর রগচটার জন্যই হয়তো শশুর বাড়িতে তাকে একটু বেশি কদর দেয়। আমিন সাহেবের শশুর বাড়িতে রাত্রিযাপন করা পোষায় না যত রাত্রিই হোক সে চলে আসবেই। আমিন সাহেবের কথা হলো শশুর বাড়ি থাকার থেকে জেলখানায় থাকা বেশ আরাম শশুর বাড়ির সুবিধা হলো খাবারটা শুধু ভালো। তার আবার খাবারের প্রতি রুচি কম তাই শশুর বাড়িতে তার দু তিন ঘন্টার বেশি থাকা হয়না। বিয়ের সময়ই যতটুকু সময় ছিল তাতে তার অবশ্য কিছু করার ছিল না বলেই থাকা। গত ৪৮ ঘন্টা ২৮৮০ মিনিট পর রাতের আলোতে রুমুকে ১০ সেকেন্ডের দেখায় আমার মধ্যে হিমালয়ের তুষার পড়া শুরু করল। এই তুষার ভেদ করে ঠিক বুঝতে পারলাম না রুমু আমার দিকে খানিকটা আড়ো চোখে তাকালো কিনা। কখনো বিকেল বেলার বৃষ্টি দেখেছ? জানালার ফাক দিয়ে দুষ্ট বৃষ্টি ফোটা তোমার গাল ছুয়ে দিল বা এক কাপ চা হাতে নিয়ে বৃষ্টির ফোটা ঘোনার খেলা। এ সময়ে বিশেষ কোন অনুভুতি আসে না মনটা শুধু কোন এক অজানায় হারিয়ে যায় ফিরে এসে মনে হয় কোথায় হারিয়ে ছিলাম। ঠিক এমনি হয়েছিল আমার কোথায় হারিয়ে আবার কোথায় ফিরে এলাম। পরদিন সকালে তোমার হাতে বানানো এক কাপ চায়ের তৃষায় ঘুমাবো এত সাহসী মন এখনো হয়নি কেবল ১ মিনিটের দেখার ব্যাকুলতা নিয়ে ঘুমালাম।
তুমি স্কুলে গেলে ঠিকি কিন্তু রিক্সাতে নয় পায়ে হেটে। আবার যেন আমার আশা ভাঙ্গল। তুমি যাচ্ছ আসছো তোমার কোন পরিবর্তন না দেখে আমার চিঠির জন্য খুব কান্না পাচ্ছিল। ৮ দিন ধরে আমার কথা গুলো না তোমার কাছে গিয়েছে না আমার কাছে আছে। বেটা রিক্সাওলাকে খুজে পেলাম আরো ৫দিন পর। প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল মানুষটার উপর কিন্তু সব রাগ চাপা দিয়ে জানতে চাইলাম চিঠিটার কথা। জানালো দিতে পারে নাই তোমার কাছে। ঢাকায় গিয়েছিল বোনের বাড়ি। বললাম চিঠিটা কোথায় সে আমাকে আসস্ত করল ঠিকমতই নাকি রেখেছে। কাল থেকে তোমাকে সে আবার তার পঙ্খিরাজে নিয়ে যাবে। আবার অপেক্ষায় রইলাম খুব ভালো লাগছিল মানুষটা এবার জানাতে পারব। এখন রাগ হচ্ছে এই ভেবে আরো কিছু কথা কেন লিখলাম না। আরো কিছু কথা বললে মন্দ হতো না। পরদিন সকালে আলাদীনের দৈত্যমশাই জানালো তোমার কাছে চিঠিটা দিয়েছে। রিক্সাওয়ালাকে এই মূর্হুতে আলাদীনের দৈত্যই মনে হচ্ছে বেটার সাহস আছে মানতেই হয়। কিন্তু আমি দৈত্যকে ভয় পাচ্ছিনা কেবল ভয় তোমাকে। তুমি তো জেনেই গেলে আমার কি অবস্থা করবে এবার। শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। যা আমাকে খুব লজ্জা দিচ্ছে।
তোমার পাশাপাশি কি তোমার চোখ যদিও খোজে আমাকে পাবেনা এতোটা সিউর হয়ে পালিয়ে তোমাকে দেখছি আমি স্বভাবগত চোর নই তোমার জন্যই চোরের ছদ্দবেশ। প্রেমে পড়লে চোরদের চরিত্রও যে রোমান্টিক মনে হয় এটা বুঝি আমিই আবিষ্কার করলাম। কিন্তু তোমার চোখ তো আমাকে খুজবে দূরে থাক তুমি তুমিই রইলে, মনে হলোই না তুমি চিঠিটা পেয়েছ।
ধরলাম বেটা রিক্সাওয়ালাকে। বেটা এমনিতেই তোতলা তার উপর আরো তুতলিয়ে বলল। চিঠিটা নাকি তুমি পড়তে পারনি যেই পড়তে গেছ ওমনি বাবার এসে হাজির। বাবারা কেন এমন হয় খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই এদের। বাবাদের জন্য একটা রোমান্টিক স্কুল দিতে হবে। জীবনান্দের কবিতা পড়াতে হবে জীবনান্দ দাস বেচে থাকলে যেভাবেই হোক মহাকবিকে দিয়েই এমন মহৎ কাজের একটা ভিত্তি তৈরি করতাম।
চেরাগের দৈত্য বেটার শাস্তি হিসেবে বললাম তোমার থেকে ফিরতি একটা চিঠি আনতে। সেও রাজি হয়ে গেল।সত্যি কি দৈত্যরা সব পারে এবেটা কি দৈত্যের সব শক্তি পেয়ে গেল। দৈত্যমশাই তুতলিয়ে একটা বায়না করলো আজকের বায়নাটা অবশ্য ভিন্ন তার প্রতিদিনের নাস্তা নয় তাকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে। কি আর করা তোমার খবর তো আমার চাই। কলিজা কেটে ভুনা করে দিতে বললেও তাই দিতে হবে।
কয়েক দিনপর ওই বেটা রিক্সাওয়ালা আমাকে নিজ থেকেই ডেকে নিয়ে বলল মামা একটা ঘটনা হয়ে গেছে আফা তো অন্য এক পুলার সাতে প্রম করে। নন্দিপুর দেকলাম এক পুলার সাতে কতা কইতাছে। কথাটা শুনে মাথায় আকাশের সব বাজ পড়লো। আমার নিজের মধ্যে শুরু হলো মহামারি। আমার সব যেন আমার থেকেই অভাবে অনাহারে অনাদরে মারা যাচ্ছে আমার চোখের সামনেই। কিন্তু মহামারিতে আমার চোখের জলটুকুও আমাকে সান্তনা দিতে পাচ্ছে না। যে চোখে এতো স্বপ্ন বুনা সেই স্বপ্ন জলে রুপান্তর করার কোন ইচ্ছাই নেই। প্রথমত আমি মানতে পারছিনা তুমি প্রেম বুঝ কিন্তু এটা আমি জানি ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা একটু দূতই বড় হয়। কিন্তু তা মানবো কি করে সেদিনের বাকা বাবুটা প্রেমও শিখিছে যাকে দেখেই বুঝলাম ভালো লাগা আবার আমার মধ্যে যা চলছে সেটাও নাকি প্রেম। এরমধ্যে মাত্রই তো পার হলো দুটি বছর তুমি এখন পড় মাত্র ক্লাস এইট। যখন ওই ক্লাসটাই আমাকে জানালো পদ্মাবতীর রুপ শিখালো তোমাকে পড়তে।
গত দু বছরে যে আমি শুধু তোমাকে ভালবেসেছি শুধু তোমার পিছু ছুটেছি এটা যেমন সত্য তেমন আমার আরো অনেক কাজও রয়েছে। তোমাকে ভালবাসা ছাড়াও আমার অনেক কাজ রয়েছে।
আর কিছুদিন পর হয়তো আমাকেই সংসারের হাল ধরতে হবে। কিছু মুখের অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু মানুষের হৃদয় কখন মানুষের জীবন নিয়ে ভাবে না। মানুষের হৃদয়টা অনেকটা লাটসাহেবের ছেলেদের মত হয় সব কিছু রঙিন করে দেখতে চায়। মানুষের হৃদয়টাও তেমন জীবনের দারিদ্রতা বুঝে না। প্রেমেরটানে মানুষটাকে রঙিন করতে চায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। ভালবেসে ফেলেছে তোমাকে। তবে রঙিন হতে দেইনি তোমাকে নিয়ে শুধু সাদামাটা একটা ভালবাসার স্বপ্ন দেখেছি। যে স্বপ্নে তোমাকে কাচের চুরি পরাবার ছলে তোমার হাত ধরার কোন বাহানা নেই। কখন তোমার চোখে ছোট্ট পোকাটি পড়বে আর আমি সেই পোকাটি বের করতে গিয়ে কতখানি ভালোবাসার কুঠির গড়েছ সে অধির আগ্রহ নিয়ে বসে থাকিনি। যদি জানতে চাও তবে ভাল কেন বাসি আমি বলল তোমাকে ভালবাসতে ইচ্ছে করে তাই ভালবাসি। আমার বাস্তব স্বপ্নের ছায়া তোমার মধ্যে পাই তাই ভালবাসা। তুমি খুব সাধারণ তাই ভালবাসি। তোমার ভাষা আমি এখন শুনতে পারিনি তোমার বোবা কন্ঠ তাই ভালবাসি।
আমি দেখিয়াছি আমার আমি তোরে
চুলগুলো তোর কাকের পালকের মত কালো
পিঠ বেয়ে কমর ছেয়ে ঝরণাধারায় বেয়ে চলে
ভ্রু দুখানি ভ্রমরের মত কালো
ফুলে বসে থাকা ভ্রমরের মত বসে আছে চক্ষুদশে
মৃগচক্ষু মনি তোর দৃষ্টি ফেলে গহিন অরণ্যে
রাতের আকাশে কোলো মেঘের ঘনঘটায়
হাজার কোটি তমাল ফুটে বরহে ম্লান
ঈর্শায় ঝলসানো চাঁদ
তবুও ভালোবসি নিসর মুখখানি!!
আমি তো এখন অনেক কিছুই বুঝি তোমার সাথে যে আমার সম্পর্ক সেই অবধি যাবেনা যেখানে পৌছালে একটা রাত দুজনে ভাগ করে নিব বা অভাবে রাতে থালা ভর্তি পানিতে চাঁদ ভিজিয়ে পানি খেয়েই রাত পোহাবো। তোমাদের থেকে আমাদের অবস্থা খুবি সামান্য। তোমাকে আমার হাতে তুলে দিয়ে কখনোই বলবে না মেয়েকে সাঁতার শিখিয়ে জলে ফেলে দিলাম। আরো অনেক কিছুই ভেবে এতো দিনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে ভালোবাসি শুধু আমার জন্যই। তোমার সাথে হয়তো ভালোবাসা, মান অভিমান, খুনশুটি ভাগাভাগি করে নিতে পারবো তাই বলে কি তোমাকে জানাতেও পারবো না তুমি কি জানবেও না কেউ তোমাকে ভালোবাসে খুব অসহায়ের মতো, যার খুব ইচ্ছে তোমার কন্ঠ স্বর শোনার।
মনে হচ্ছে একটা সুযোগ পেয়েছি তাই অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা নিয়ের বসেছিলাম। ধরো তোমাকে কিভাবে GSC তে question পাঠিয়েছেলাম, একদিনে চাদনি রাতে তোমাদের বাড়ির বাহিরে কেন অতগুলো রজনীগন্ধা ফেলে রেখেছিলাম, কত দিন বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে এক পলক দেখার জন্য পুলিন স্যারের দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিলাম। আরো কতশত বোকামির ভার তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম। তোমার সাথে আমার একাকি সব ঘটনাই তোমাকে জানানোর খুব ইচ্ছে। কোন স্বার্থ ছাড়াই জানাতে চাই তবে কিছু জানার দূসাহস করিনা। কিন্তু হঠাৎ আমি লেখা বন্ধ করে দিলাম কারণ লেখার এখনো অনেক বাকি ততটুকু লিখে যাবার সাহস আমার হচ্ছে না। আমার কয়েকদিন ধরে কেবল মনে হচ্ছে আমি এই ’কোরনা’ মহামারিতে মারা যাব। চোখ বুঝলে নিজের মৃতু শরীরটা
অনুভব করতে পাই। আমি খুব ভীতু এটা কখন মনে হয়নি কিন্তু যখন নিজের শরীরে কাফনের কাপড় জড়ানো দেখছি তখন আর কিছু মাথায় আনতে পারছিনা। আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি এতক্ষনে তুমি নিশ্চই বুঝে গেছ। তবে আমি তোমাকে পেতে চাই বিষয়টা এমন নয় মোটেও নয়। এটা কেবল আমার স্বপ্ন বাস্তবে কোন দিন তুমি আমি এক হবার নয়। মজার ব্যাপার হলো একা একা এই ১২ বছরে নিজের সাথে নিজের ভালবাসাগুলেঅ এমন ভাবে মানিয়ে নিয়েছি যে আমার আর তোমার সাথে ভাগাভাগি বা দিতেও ইচ্ছা করে না।
শুধু জানাতে চাই...... আমি তোমাকে বড্ড বেশি..............
লেখাটা যদি শেষ না করতে পারি আর পারলেও যদি তোমার কাছে পৌছাতে না পারি তাই মাঝ পথে লেখাটা থামিয়ে দিলাম।
0 Comments