See

6/recent/ticker-posts

জীবন আপনার কিন্তু চাহিদা কেন অন্যের পূরণ করছেন?

প্রত্যাশা আপনার হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে

সাড়াজাগানো "Three idiots" ছবির কথা নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে? যে চুল লম্বা ছেলেটা! খুবই ক্রিয়েটিভ ছিল। তার বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে পাশ করে বের হবে খুব ভালো সিজিপিএ নিয়ে। কিন্তু ছেলেটা মোটেও সেরকম স্বপ্ন দেখতো না। তার স্বপ্ন আর বাবার এক্সপেক্টেশানের মাঝে পড়ে যখন দেখলো স্বপ্নটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন জীবনটাকেই "I QUIT" বলে সব শেষ করে দিলো!


এই প্রত্যাশার চাপ শুরু হয় জন্মের পর থেকেই! যেন মুখ থেকে কথা ফুটার সাথে সাথেই সে এক নাগাড়ে , বলতে পারে এমন ব্যবস্থা করা গেলে সেটাই বোধহয় করা হতো! এক্সামে কিন্তু ভালো করতে হবে, ক্লাসে কিন্তু ফার্স্ট হতে হবে, তোমাকে কিন্তু ডাক্তার হতে হবে, শুধু এম বি বি এস হলেই হবে না, তোমাকে কিন্তু এম ফিল, এম ডি, এফসিপিএস, পিএইচডি সব করতে হবে! এভাবে করে এক্সপেক্টেশান বেড়েই চলে! সব এক্সপেক্টেশান কি আসলেই মেটানো সম্ভব? আর এক্সপেক্টেশান মেটানো না গেলে যেই কথার বানে জর্জরিত হতে হবে তা সহ্য করার মত "ঢাল" আমাদের প্রস্তুত আছে তো?

আমি আমাকে কতটুকু POSITIVELY দেখছি
অন্যের ভাবনায় নিজেকে দেখা অন্যায়



যখন আমরা এই কৌশলগুলোকে ফলো করে নিজেকে সেই স্বচ্ছ "আয়না" দিয়ে দেখতে পারবো তখন আমাদের একটা শক্তিশালী বেস তৈরি হবে। অপ্রস্তুত মুহূর্তগুলোকে ঘাবড়ে না গিয়ে বরং নিজের শক্তি লিমিটেশন বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী আগানো সহজ হবে। কেননা সবকিছুর পর দিনশেষে শুধুমাত্র আপনার "ইনার ভয়েস"- আপনার হয়ে কথা বলবে!

এই পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষই ভিন্ন। একেকজনের একেক দিকে দক্ষতা। আর একেক দক্ষতার একেক কর্মক্ষেত্র! হাতিকে দিয়ে যদি আশা করেন মধু সংগ্রহ করাবেন, সেটা কতটা যৌক্তিক? অন্যদিকে মৌমাছি তো আর হাল চাষ করতে পারে না! ভেবে দেখুন তো বড় বড় সব মানুষেরা যদি তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া প্রত্যাশার বোঝা নিজেদের ঘাড়ে রেখে দিতেন, তাহলে কি তারা জীবনে "নতুন" কিছু করতে পারতেন?

বাড়তি চাপের ভারে আমাদের অনেক সম্ভাবনাময়ীর সম্ভাবনার "কফিন" হয়ে যায়! সবার মন রক্ষা করতে গিয়ে বেলা শেষে দেখা যায়, আমি সবার আমি হলাম কিন্তু "আমার আমি" হতে পারলাম না!

আমাদের এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, প্রত্যাশা যে শুধু আমরা অন্যের উপর চাপাই বা অন্যরা আমাদের উপর চাপান এমন কিন্তু না। আমরাও আমাদের উপর সাবকনশাসলি অনেক ধরণের প্রত্যাশা চাপিয়ে দেই। কখনো আমরা এক্সপেক্ট করি ওর বউ দেখতে এমন সুন্দরী সুতরাং "সমতা" রক্ষায় আমার বউকেও এমন সুন্দর হতে হবে! আমার বিয়ে এমনভাবে হবে যেভাবে হালের কোন এক নায়ক বা নায়িকার বিয়ে হয়েছে!

পরিবারের কিংবা সমাজের অথবা নিজের এসব এক্সপেক্টেশানগুলো যখন আমরা নিজেদের "টু ডু" লিস্টে জায়গা করে দেই আর এসব এক্সপেক্টেশান পূরণ করাকে জীবনের উদ্দেশ্য মনে করে নেই তখন সেগুলো হয়ে যায় জীবনের জন্য বাড়তি "বোঝা"! আর যখন সেগুলো পূরণ না হয়, তখন আমরা নিজেদের গায়ে নিজেরাই ট্যাগ লাগিয়ে দেই "FAILED"! ট্রেন্ড ফলো করে তৈরি জীবনের উদ্দেশ্যগুলো যখন ব্যর্থ হয়ে যায় তখন স্বভাবতই নেমে আসে হতাশার "কালো মেঘ"!

জীবনটা আপনার! আপনাকে বুঝতে হবে কার এক্সপেক্টেশানটাকে আপনি আসলেই আপনার টু ডু লিস্টে জায়গা করে দিবেন আর কারটা আসলে আপনার জন্য নয়। তাহলে অন্তত একটা সময় এসে এই কথা ভেবে মন খারাপ হবে না যে, অমুক চেয়েছিল বলেই আজ আমি এখানে এসেছি, তাই আমার এই পরিণতির জন্য তিনিই দায়ী!

প্রত্যাশা সব সময় খারাপ না। আপনার বাবা মা যদি আপনার উপর আশাগুলো চড়িয়ে না দিতেন, আপনি হয়তো হিমশিম খেতেন জীবনের দিশা খুঁজে পেতে! আপনাকে যদি না বুঝিয়ে দিতেন জীবনে চলার জন্য আপনার কোথায় পৌঁছাতে হবে, আপনার চলার পথ হয়তো এতটা মসৃণ হত না! মাঝে মাঝে এই এক্সপেক্টেশানটা জীবনের জন্য বেশ পজিটিভ মোটিভেটিং ফ্যাক্টর হতে পারে। এটা আপনাকে দেখিয়ে দিতে পারে জীবনে আপনাক কোথায় যেতে হবে। তাই অহেতুক এবং যুক্তিপূর্ণ প্রত্যাশার মাঝে একটা "ব্যালেন্স" ঠিক করতে হবে যেন সেটা আপনার জন্য সুফল বয়ে আনে!

নিজের কাছে আমরা সবাই আসলে কতটুকু পরিচিত? অন্যের ব্যাপারে খুব সহজে অনেক কিছু বিশ্লেষণ করা গেলেও নিজের ক্ষেত্রে সেই যোগ বিয়োগের হিসাব বেশ দুর্বোধ্য! অনেকক্ষেত্রে আবার শুধুমাত্র বাহ্যিক অবয়বে দাঁড় করিয়ে নিজেদের সংজ্ঞায়ীত করতে চাই! আমি চিকন না মোটা, খাটো নাকি লম্বা এগুলো নিয়ে হরহামেশাই নিজেদের বিশেষ বিশেষ "ট্যাগ" জুড়ে দেই! কোন রঙের জামাটা গায়ে বেশি মানাবে, ব্র‍্যান্ডের কোন ক্রিমটি স্পট দূর করবে, কোন হেয়ার স্টাইল সবথেকে আকর্ষণীয় সেই বিষয়ে কমবেশি আমরা সকলেই জ্ঞান রাখি কিন্তু নিজের ভ্যালুগুলো বা ইচ্ছাগুলো একইভাবে কি বুঝতে পারি?


অনেক সময় নিজের প্রতি ডেফিনিশন গুলো কখনো কখনো অন্যের ধারণা দ্বারা সমাদৃত হয়। কেউ কোন একটা জাজমেন্টাল কথা বললো আমরা সেটাকে সত্য ধরে বসে থাকি। কখনো কখনো জীবনের ঘটনা দ্বারাও এক্সটার্নালি বায়াসড হয়ে নিজের প্রতি ভুল পারসেপশন তৈরি হয়। যেমন-

  1. "আমার চার বছরের সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে সুতরাং আমি পুরোপুরি একটা আবর্জনা"

  2. "আমি পরীক্ষায় খারাপ করেছি তাই আমি ব্যর্থ"

  3. "ভাইভা বোর্ডে মুখ খুলতে পারিনি সুতরাং আমি একটা গর্ধব"

নিজেকে ডিফাইন করতে হাজার রকম নেগেটিভিটির তকমা জুড়ে দেই। এসবের ভীড়ে আসল আমি কি "ঠিকানাবিহীন" হয়ে যাচ্ছি? মনের ভঙুর এই অনুভূতিগুলো কোনমতে স্কচটেপ দিয়ে জোড়া লাগিয়ে প্রতিনিয়ত পারফেক্ট আমি এর "ছদ্মবেশে" জীবনটা কি মঞ্চ নাটকের মত হয়ে যাচ্ছে?

অবয়বের সৌন্দর্য্য বর্ধনকারী নামীদামী সব প্রোডাক্টসের সাথে সাথে নিজের ভেতরকার বৈশিষ্ট্যগুলোকেও বুঝতে হবে। আমরা সেটাকে বলে থাকে "ডিফাইনিং মাইসেল্ফ"!

  • নিজের দিকে আগে "নন জাজমেন্টাল" মনোভাব নিয়ে তাকাতে শুরু করুন। নিজেকে ডিফাইন করার জন্য আপনার যেটা প্রয়োজন তা হলো গভীর পর্যবেক্ষণ, কঠোর সমালোচনা নয়!

  • নিজের থট প্রসেসকে এক্টিভেট করুন। আপনার ভূমিকাগুলো নিয়ে ভাবুন, চিন্তা করুন। অফিসের বস কিংবা কারো স্ত্রী কী কী ভূমিকা আপনাকে প্রতিনিয়ত পালন করতে হয়

  • ডিসকভার করতে শুরু করুন নিজের শক্তিশালী দুর্বল বিষয়গুলোকে। কোনটি আপনি সহজে করে ফেলতে পারেন এবং কোনটি আপনার জন্য কঠিন মনে হয়

  • কারো সাথে নিজেকে তুলনা করে নিজের সংজ্ঞা দাঁড় করাবেন না। কেউ ভালো গান করতে পারে আর আপনি পারেন না দেখে যে আর কোন কিছু আপনার মধ্যে অবশিষ্ট নেই এমন ভাবাটা ভুল। মেনে নিতে হবে একজন মানুষ অন্যজন্য থেকে একেবারেই আলাদা এবং অনন্য!

  • নিজের "কোর ভ্যালু" সৃষ্টি করুন। আশেপাশের অনেক কিছু ঠিক না থাকলেও শুধুমাত্র এই ভ্যালুর জোরে আপনি অনেক দূর এগিয়ে যাবেন

  • নিজের বৈশিষ্ট্যকে বুঝতে প্রয়োজন আমি কী কী পারি সেই হিসাব, যা পারি না বা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ না তা এই হিসেবে এসে বাম হাত ঢোকাবে না

Post a Comment

0 Comments